প্রাণ ফিরে পেতে চায় পাবনা’র বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগরেরা

প্রাণ ফিরে পেতে চায় পাবনা'র বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগরেরা

শিশির ইসলাম : আধুনিকতার ছোয়ায় বাজারে এসেছে নানারকম ইলেকট্রনিক্স বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন রকম ডিভাইস ও এ্যাপস্।  যার ফলে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে ডুগিতবলা ও হারমোনিয়ামের ব্যবহার। বাদ্যযন্ত্র মানব সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই প্রচলিত, সময়ের সাথে সাথে তাদের রূপভেদ হয়েছে শুধু। প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রসমূহ ব্যবহৃত হতো মূলত বিভিন্ন ধর্মীয় ও প্রথাগত আচার-অনুষ্ঠানে। তখন সেগুলো ব্যবহৃত হতো একেকটা একেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে। ধীরে ধীরে সংস্কৃতির বিকাশ হয় এবং মানুষ বাদ্যযন্ত্রসমূহের  ব্যবহার বিনোদনের জন্য।

এক সময়  যাত্রাপালা থেকে শুরু করে পারিবারিক আচার অনুষ্ঠানে হারমোনিয়াম, ডুগিতবলা ব্যবহারের প্রচলন থাকলেও ক্রমেই হাড়িয়ে যেতে বসেছে ডুগিতবলার শব্দ আর হারমোয়ামের সূর, তৈরীর কাঁচামলের দামবৃদ্ধি, বিক্রি তুলনামূলক হ্রাস পাওয়া সহ সরকারিভাবে সহজ শর্তে  ঋণ বা কোন প্রকার সুযোগসুবিধা না থাকায়, কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীন এ শিল্প।

অনেকেই জীবন জীবিকার তাগিদে পেশ পরিবর্তন করে বেছে নিয়েছেন ভীন্ন পেশা। একসময়ে জৌলুস থাকলেও এখন গুটিকয়েক মানুষ নানা প্রতিবন্ধকতায় কোনরকমে টিকিয়ে রেখেছে বাপ দাদার পেশা। লোকজ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এ শিল্প।

এ বিষয়ে কথা হয় পাবনা পৌর সদরের কয়েকজন বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগরের সাথে। কথা বললে তারা জানান কষ্ট হলেও বাপ দাদার পেশা তাই কষ্ট হলেও টিকিয়ে রেখেছি তা না হলে আমরা অনেক আগে অন্য পেশায় যুক্ত হতাম।

বাদ্যযন্ত্র তৈরীর শিল্পী সুরজিত রবি দাসের নাতী ও সুর তরঙ্গের সত্বাধিকারী রামকৃষ্ণ মনিদাস জানান
১৯৭৩ সাল থেকে দাদু সুরেন্দ্র মনিদাস বাদ্যযন্ত্র তৈরীর কাজ শুরু করেন তাঁর  মৃত্যুর পর ১৯৯৮ সালে বাবার হাত ধরে ডুগি তবলা, ঢোল, তৈরীর কাজ শুরু করেন এবং পৈতৃক পেশা হিসেবে হাল ধরেন, কিন্তু বতমানে কাচামালের দাম বৃদ্ধি ডিজিটাল যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে তেমন অর্ডার আসেনা বা তৈরি মালামালও বিক্রি হয়না যার ফলস্বরূপ যে আয় রোজগার তাতে করে পরিবার সন্তান নিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছে। তবে সরকারি বেসরকারি ভাবে সহযোগিতা পেলে আবার এ পেশার প্রাণ ফিরে পাব বলে মনে করি।

পাবনার শালগাড়িয়ার বাসিন্দা পরিতোষ চন্দ্র জানান ৪০ বছর ধরে তিনি এ পেশার সাথে জরিত,  বর্তমানে মোবাইল ফোন সব নানা ইলেকট্রনিক ডিভাইস যন্ত্র বাজারে আসার ফলে আমাদের ব্যবসা নেই বললেই চলে তবে সংস্কৃতির বিকাশ বৃদ্ধি করতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে আবারো আগের রুপ ফিরবে বলে আশাবাদী।

দীর্ঘদিন হারমোনিয়াম তৈরির কাজে নিয়োজিত পাবনা শহরের সুরনিকেতনের সত্বাধিকারী সঞ্জয় কুমার সিংহ জানান তিনি প্রায় ৪১ বছরের বেশি সময় ধরে হারমোনিয়াম তৈরী করে আসছি কিন্তু আগেরমত সেই ব্যবসায়ের প্রাণ নেই আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষ সংস্কৃত থেকে দূরে সরে গিয়েছে অর্থাৎ সংস্কৃতির ধারা পাল্টেছে যার ফলে আমাদের এ পেশা আমার পরবর্তী প্রজন্ম টিকিয়ে রাখতে পারবে বলে মনে করিনা।  তবে সংস্কৃতির বিকাশ বৃদ্ধি ও আগ্রহী করে তুলতে পারলে অনেকটাই আগের রুপে স্ব-গৌরবে  ফিরবে বলে মনে করি।

সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে নানা উদ্যোগ এর কথা জানিয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন সংস্কৃতি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রাচীন কাল থেকে আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে সংস্কৃতির অবদান রয়েছে।  এখন সবকিছু ডিজিটালাইজেশন বিশ্বায়নের যুগেও আমরা প্রাণ ফিরে পাই পুরোনো বাদ্যযন্ত্রে সেক্ষেত্রে এটাকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের সংস্কৃতির প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ তৈরি করতে হবে সেইসাথে যারা এ পেশার হাল ধরে আছে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তবেই আমরা আমাদের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবো বলে মনে করি।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে ডুগিতবলা, হারমোনিয়াম সহ নানারকম বাদ্যযন্ত্র তৈরীর শিল্প।

  1. ছবিটি পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ রোড অবস্থিত পৌর মার্কেটে সুর তরঙ্গ থেকে তোলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *