সংবাদদাতাঃ পাবনার চাটমোহরে ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দুই গ্রামের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারি খাস জমির ওই ঈদগাহ নিজেদের দাবি করছে উপজেলার আটলংকা গ্রামবাসী। কিন্তু এই দাবি মানতে নারাজ একই ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায়কারী পার্শ্ববর্তী বন্যাগাড়ী গ্রামবাসী। ঈদগাহ মাঠের নামকরন নিয়ে পাশাপাশি দুই গ্রামের মানুষের দ্বন্দ্বের জেরে গত তিন সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে স্থানীয় আটলংকা বাজারের অন্তত ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তাদের। অনেকে বিভিন্ন এনজিও’র ঋনের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে পড়েছেন বিপাকে। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ঈদগাহ মাঠে সাইন বোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে,এটা সরকারি জমি। কেউ বিনা অনুমতিতে এই জায়গা ব্যবহার করতে পারবেন না।
উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বন্যাগাড়ি গ্রামের ভুক্তভোগী ২০ জন ব্যবসায়ী পরিস্থিত থেকে উত্তোরণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এখনও সুরাহা পাননি তারা। তবে থানা পুলিশের আন্তরিকতার অভাবে বিষয়টি মিমাংসা হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা জানান।
জানা গেছে,উপজেলার আটলংকা বাজারের পাশে চিকনাই নদীর ধারে অবস্থিত ঈদগাহ মাঠের নামকরন নিয়ে বন্যাগাড়ি ও আটলংকা গ্রামের মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এ নিয়ে গত ২ অক্টোবর দুই গ্রামবাসী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। ওই ঘটনার পর থেকে দুই গ্রামবাসীর দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। আটলংকা বাজারে রয়েছে বন্যাগাড়ি গ্রামের অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সংঘর্ষের ঘটনার পর তাদের সেই সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্যাগাড়ি গ্রামের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ,আটলংকা গ্রামের মানুষ তাদের বাজারে যেতে দিচ্ছে না। দোকানপাট খুলতে দিচ্ছে না। নানাভাবেহুমকি দিচ্ছে। তারা নিরুপায় হয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না।
মামুন টেইলার্স এর মালিক আল মামুন বলেন,ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে ঠিক আছে। তাই বলে আমরা বাজারে ব্যবসা করতে পারব না কেন। আমাদেরকে দোকান খুলতে দিচ্ছে না আটলংকা গ্রামের মানুষ। ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে এখন ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারছি না। বিগত ১৭/১৮ দিন ধরে দোকান বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে খুব হতাশায় দিন কাটাচ্ছি।
মুদি দোকানদার হাবিবুল্লাহ বলেন,দোকান বন্ধ থাকায় আমার দোকানের মালামাল নষ্ট হচ্ছে। এই ক্ষতি আমাকে কে পুষিয়ে দেবে। ব্যবসা করতে না পারলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে। দোকান খুলতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে।
পল্লী চিকিৎসক আব্দুল করিম বলেন,দোকান বন্ধ থাকায় আমি ওষুধপত্র নিয়ে রোগী দেখতে পারছি না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এভাবে তো চলতে পারে না। গ্রামে রোগীরাও কষ্ট পাচ্ছে।
রড সিমেন্ট ঢেউটিন ব্যবসায়ী ফজলুল হক,ওয়ার্কসপ মালিক রুবেল হোসেন বলেন,অনেকগুলো টাকা ঋণ নিয়ে আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। এ সপ্তাহে আমাদের কিস্তি আছে। কিভাবে কিস্তি দেব সেই চিন্তায় আমরা দিশেহারা। ব্যবসা করতে না পারায় আমরা পরিবার নিয়ে খুব করুন অবস্থা পার করছি। আমি অসুস্থ মানুষ, চিকিৎসার টাকা পর্যন্ত জোগাড় করতে পারছি না।
বন্যাগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হাকিম অভিযোগ করেন,আটলংকা গ্রামের লোকজন তাদের বাজারে যেতে দিচ্ছেন না। নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। বন্যাগাড়ী গ্রামের ২০/২৫টি দোকান বন্ধ রয়েছে। থানায় জানিয়েও কোন সমাধান মিলছেনা।
আটলংকা গ্রামের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম হারেজ বলেন, আমাদের যাতায়াতের সড়ক অবরোধ করেছে বন্যাগাড়ীর লোকজন। অনেক পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আটলংকা গ্রামের অনেককে তারা হেনস্থা করেছেন। বাজারের দোকানপাট খুলতে দিবে কিনা,তা গ্রামবাসী ও প্রধানরা জানেন,আমার বলার কিছু নেই।
আটলংকা গ্রামের বাসিন্দা, উপজেলা বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ মাহমুদুল আলম মাহমুদ বলেন, গ্রামের মুরুব্বীরা আছেন, গ্রাম প্রধানরা আছেন,সবাইকে ডেকে নিয়ে বসে আলোচনা করে দেখি কি করা যায়।
ভুক্তভোগীরা বলেন,এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এখনও কোন সূরাহা পাইনি। প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করে তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
এ বিষয়ে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল আলম বলেন, উভয়পক্ষ কে নিয়ে বসে আলোচনা করেছি। দুই পক্ষের ইতিবাচক মনোভাব পাওয়া গেছে। আটলংকা গ্রামের মানুষ বন্যাগাড়ি দিয়ে চলাচল করবে। আবার বন্যাগাড়ি গ্রামের মানুষও আটলংকা বাজারে যাবে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলবে। আশা করছি দু’একদিনের মধ্যে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হবে।






