পাবনায় ভেজাল যৌন উত্তেজক ওষুধের কারখানা, স্বাস্থ্যঝুঁকি, সামাজিক অপরাধের বিস্তার

পাবনায় ভেজাল যৌন উত্তেজক ওষুধের কারখানা, স্বাস্থ্যঝুঁকি, সামাজিক অপরাধের বিস্তার

সংবাদদাতাঃ পাবনায় ইউনানী ও আয়ুর্বেদী ওষুধ কোম্পানির আড়ালে গড়ে উঠেছে ভয়াবহ এক অবৈধ ব্যবসা। এসব প্রতিষ্ঠানে তৈরি হচ্ছে যৌন উত্তেজক সিরাপ, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল, যা কোটি টাকার বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভেজাল ওষুধ কেবল জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিই তৈরি করছে না, পাশাপাশি নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছে।

 

পাবনায় অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিভিন্ন নামে শতাধিক প্রতিষ্ঠান উত্তেজক ওষুধ উৎপাদন করছে। এর অধিকাংশেরই নেই কোনো অনুমোদন; একটি লাইসেন্স ব্যবহার করে একাধিক ব্র্যান্ড চালানো হচ্ছে। ভায়াগ্রা, সিনেগ্রা, ভিগার, কামশক্তি, ওয়ানগ্রা, রিফিল, জিনসিন, লিবিডেক্সসহ অসংখ্য দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ড এখন সহজেই পাওয়া যায় এমনকি পানের দোকানেও।

এসব ভেজাল ওষুধের কারণে তরুণ প্রজন্ম নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব সিরাপ ও ট্যাবলেটে থাকা রাসায়নিক উপাদান কিডনি ও লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পাশাপাশি পারিবারিক অশান্তি, যৌন বিকৃতি এবং অপরাধ বৃদ্ধির সঙ্গেও এর সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে।

অবৈধ ব্যবসায়ীরা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। কেউ হাসপাতাল, কেউ ডায়াগনস্টিক সেন্টার আবার কেউ নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। প্রশাসন ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই তারা বছরের পর বছর এ ব্যবসা চালাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে অভিযান হলেও তা লোক দেখানো মাত্র- আসল চক্র রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

 

এই ব্যাবসায়ীরা “মেডিসিন এন্ড ফুড ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন” নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। যার আড়ালেই চলে মাসিক চাঁদা তুলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কার্যক্রম। এই সংগঠনের প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক, ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি জনমনে আরও প্রশ্ন তোলে।

বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, যৌন উত্তেজক সিরাপ ও ভেজাল ওষুধের সহজলভ্যতাই ধর্ষণ ও যৌন অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে প্রতিকার পাচ্ছেন না।

 

পাবনার সমাজসেবক ও চিকিৎসক ক্যাপ্টেন (অবঃ) ডা. সরোয়ার জাহান ফয়েজ বলেন, “এখনই কঠোর আইনগত ব্যবস্থা ও সঠিক মনিটরিং না হলে তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও সমাজ- উভয়ই ভয়াবহ সংকটে পড়বে।”

অন্যদিকে পাবনার ড্রাগ সুপার নাজমুল হাসান দাবি করেছেন, তারা নিয়মিত নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠান, অসঙ্গতি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *